“সন্ধ্যার সায়মন” – প্রথম অধ্যায় (উপহারস্বরূপ)
“সন্ধ্যার সায়মন” এটি কেবল একটি নাম নয়! এটি একটি শহরের, একটি পরিবারের এবং একটি সেহেজাদার বিনয়ী ও সহানুভূতি স্বভাবের উদাহরণ।
– ২৪শে মার্চ ২০২৩ইং।
এই তারিখ টি ছিলো বাঙ্গালী মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে বেশ আনন্দময় । একে তো শুক্রবার, (পবিত্র জুম্মা মোবারক) আর অন্যদিকে পহেলা রমজান, (পবিত্র রমজানুল মোবারাক)। এমনই একটা দিনের অপেক্ষা করছিলো বাঙ্গালী মুসলিম সম্প্রদায়। যেখানে থাকবে গুনা মাফ হওয়ার একটি সুযোগ এবং অজস্র রহমত লাভ করার একটি পথ। ঠিক এমনই একটা দিন উপহার দিলেন আমাদের পরম করুণাময় মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন। সুবহানাল্লাহ…
কিন্তু যদি একটু পিছনে যাওয়া হয় তবে এই দিনটির পুরোপুরি স্বাদ পাওয়া যাবে! আর তা হলো বৃহস্পতিবার রাত। সেই রাতে এশার নামাজের পর শুরু হওয়া তারাবীর নামাজ। সমস্ত মুসলিম সম্প্রদায় এই তারাবী নামাজের মাধ্যমেই শুরু করে রমজানের প্রথম সফর। তাই এই বিষয়টিকে স্মরণে রেখে, সকল মুসলিম সম্প্রদায় সেদিন নিজেদের কর্মস্থল ও পরিবার বর্গকে ফেলে সামিল হয় আল্লাহর দরবারে। ঠিক তেমনিভাবে ওইদিন সামিল হয়েছিলো জাবেদ সিকদার এবং তাঁর একমাত্র সেহেজাদা সায়মন সিকদার।
জাবেদ সিকদার হলো বাংলাদেশের বানিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম জেলার একজন অস্থায়ী বাসিন্দা। তিনি খুবই ধর্মপ্রাণ ও বিনয়ী স্বভাবের মানুষ। জাবেদ সিকদার পেশায় একজন পোশাক বিক্রেতা। আর তাঁর একমাত্র সন্তান সায়মন সিকদার, যার বয়স মাত্র ১০বছর। তিনিও স্বভাব-চরিত্র, চলাফেরায় বেশ তাঁর পিতারই অনুসারী। সায়মন খুবই মেধাবী একটি ছেলে। তবে একটি সমস্যা আছে! আর তা হলো প্রশ্ন করা! সায়মন যেকোনো বিষয়ের উপর প্রচুর প্রশ্ন করে থাকে, এবং উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত পিছু ছাড়েন না। যার ফলে তাঁর বাবা মা প্রায় সময়ই বেশ সমস্যায় পড়ে থাকেন।
যাই হোক,
এবার মূল গল্পে আসা যাক। সায়মন ও তাঁর পিতা জাবেদ সিকদার তারাবী নামাজ শেষ করে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দেন। পথিমধ্যে সায়মন তাঁর পিতার কাছে জুস খাওয়ার আবদার করে, আর তাঁর পিতা তাঁকে জুস কিনেও দেয়। কিন্তু মজার বিষয় হলো, সায়মন জুস হাতে পেয়ে তাঁর পিতাকে ধন্যবাদ দেওয়ার বিপরীতে তাঁর দিকে একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে মারেন! আর তা হলো-
সায়মন :- আচ্ছা বাবা, আমায় একটি প্রশ্নের উত্তর দিবেন?
পিতা (জাবেদ) :- হ্যাঁ বলো।
সায়মন :- বাবা, আমি প্রায় সময়ই দেখি প্রতিটি বাবা’ই তাঁর ছেলে মেয়ের সকল চাওয়া পাওয়া পূরণ করে থাকে। এর কারণ কি আমায় বলবেন?
সায়মনের এই প্রশ্নের জবাবে তাঁর পিতা জাবেদ বলেন-
পিতা (জাবেদ) :- বেটা, প্রতিটি বাবা’র কাছেই তাঁর ছেলে মেয়ে সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে উপহার স্বরূপ হয়ে থাকে। তাই প্রতিটি বাবা সেই উপহারের সঠিক হেফাজত করে থাকেন।
পিতার জবাব শুনে সায়মন খুবই অবাক হন এবং বলেন :- তাহলে কি বাবা, আমিও সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে আসা আপনার জন্য একটি উপহার?
পিতা জাবেদ মুচকি হেসে নিজ সন্তানকে বলেন :- হ্যাঁ বেটা, তুমি ঠিকই বলেছো।
পিতার মুখে প্রশ্নের যথাযথ জবাব পেয়ে সায়মন বেশ খুশি হন। অতঃপর সায়মন ও তাঁর পিতা বাসার দিকে আবারো হাঁটতে লাগলেন। এবং কিছু সময় পর তাঁরা বাসায় পৌঁছে গেলেন। বাসায় ফিরে সায়মন সরাসরি তাঁর মা সালমা বেগমকে জড়িয়ে ধরেন। এবং বলেন-
সায়মন :- মা, আপনি জানেন আজকে বাবা আমায় একটা গোপন কথা বলেছেন?
তাঁর মা (সালমা) বিপরীত বলেন :- কি গোপন কথা বেটা?
সায়মন বলেন :- বাবা বলেছেন, আমি নাকি সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে পাঠানো তাঁর জন্য উপহারস্বরূপ।
মা (সালমা বেগম) মুচকি হেসে বলেন :- হ্যাঁ বেটা, তিনি তো ঠিকই বলেছেন। তুমি সত্যিই আমাদের কাছে সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে পাঠানো একটি উপহার।
এই বলে মা (সালমা) নিজ ছেলেকে আদর করে দেন। আর বলেন –
মা (সালমা) :- যাও বেটা, খাবার টেবিলে গিয়ে বসো। আমরা একসাথে রাতের খাবার খাবো।
অতঃপর সায়মন তাঁর মায়ের কথা মতো খাবার টেবিলের উদ্দেশ্যে চলে যায়। ঠিক তখনই সালমা তাঁর স্বামী জাবেদ কে উদ্দেশ্য করে বলেন –
সালমা :- আচ্ছা, সায়মন কি আজকেও আপনাকে জ্বালিয়েছে?
জাবেদ :- না বেগম। তোমার ছেলে আজ আমায় একটুও জ্বালায়নি, বরংচ সে অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ প্রশ্ন খুব কমই করেছে।
জাবেদ এর কথা শুনে বিবি সালমা একটু মুচকি হাসলেন এবং বললেন –
সালমা :- যান আপনিও খাবার টেবিলে গিয়ে বসুন, আমি খাবার নিয়ে আসছি।
অতঃপর জাবেদ বিবির কথায় সম্মতি জানিয়ে, তিনিও খাবার টেবিলের দিকে চলে যায়। এবং অন্যদিকে বিবি সালমা তাঁদের খাবার প্রস্তুত করতে লাগলেন।
কিছু সময় পর বিবি সালমা তাঁদের সম্মুখে খাবার নিয়ে আসেন। এবং তাঁরা সকলেই একসাথে খাবার খেতে বসে পড়েন। খাবার খাওয়া শেষ হলে বিবি সালমা নিজ সন্তানকে ঘুম পাড়ানোর উদ্দেশ্যে তাঁর রুমে গমন করেন। অতঃপর সায়মন’কে ঘুম পাড়িয়ে তিনি নিজ রুম চলে আসেন। এবং নিজ রুমে এসে তিনি দেখতে পান, তাঁর স্বামী (জাবেদ) না ঘুমিয়ে এখনো বই পড়ছেন। এই দেখে বিবি সালমা তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেন-
বিবি সালমা :- আপনি এখনো ঘুমান নি?
স্বামী (জাবেদ) :- না, ঘুম আসছিলো না! তাই একটু বই পড়ছিলাম। আচ্ছা, সায়মন কি ঘুমিয়েছে?
জবাবে বিবি সালমা বলেন-
বিবি সালমা :- হ্যাঁ, ও ঘুমিয়ে গেছে। আর আপনিও ঘুমিয়ে পড়ুন। সেহেরীর সময় তো আবার উঠতে হবে, তাই না!
স্বামী (জাবেদ) :- হ্যাঁ বেগম, তুমি ঠিকই বলেছো। চলো ঘুমিয়ে পড়া যাক।
এরপর স্বামী জাবেদ ও বিবি সালমা একসাথে ঘুমিয়ে পড়েন।
অতঃপর সুন্দর একটি রাতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় পবিত্র জুম্মাবার ও পহেলা রমজান। মোবারক হো. মোবারাক হো. মোবারক হো…
ঘড়িতে সময় রাত ০৪টা বেজে ১০ মিনিট। হঠাৎই বিকট শব্দে বেজে উঠলো এলার্মের আওয়াজ। আর সেই আওয়াজটি বাজছিলো নূর ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায়, রুম নং ০৪ এ। এবং সেই রুমে বসবাস করছিলেন সিকদার পরিবার। এলার্মের বিরক্তিকর আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় বিবি সালমার। আর ঘুম থেকে উঠেই রুমের বাতি জ্বালিয়ে দেন তিনি। এবং এলার্মটি বন্ধ করে সোজা চলে যান ওয়াশরুমের দিকে। অতঃপর বিবি সালমা হাত মুখ ধুয়ে টেবিলে সেহেরীর খাবার প্রস্তুত করতে লাগলেন। বিবি সালমা সেহেরীর খাবার প্রস্তুত করে, সোজা তাঁর সন্তান (সায়মন) এর রুমে দিকে অগ্রসর হন। কারণ তিনি চান সায়মনও এইবার রোজার রাখার অভ্যাস করুক। তাই তাঁকে সেহেরী খাওয়ার জন্য অবশ্যই ডাঁকা দরকার। কিন্তু বড় আশ্চর্যের ব্যাপার! বিবি সালমা তাঁর সন্তান (সায়মন) এর রুমে প্রবেশ করে যেই দৃশ্য দেখেন, তা সত্যিই তাঁকে বেশ অবাক করে তোলো। আর সেই দৃশ্যটি হলো-
শীগ্রই আসবে… দ্বিতীয় অধ্যায় (সেহেরীর প্রশ্ন)
Leave a Reply