সিরাজগঞ্জে পৃথক দুটি হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া দুটি শিশুর মধ্যে এক শিশুকে জীবিত ও অপর শিশুকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। সিসি টিভির ভুটেজ ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার গভীর রাতে পুলিশের একটি দল সিরাজগঞ্জের সলংগা থানার আলোকদিয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে এ শিশু দুটি উদ্ধার করা হয়। এ দুটি ঘটনায় ৫ নারীসহ ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলো, ওই গ্রামের মৃত সোলায়মান হোসেনের স্ত্রী সয়রন বিবি (৫৫), তার মেয়ে আলপনা খাতুন (২৪), ছেলে রবিউল ইসলাম (৩০), রবিউলের স্ত্রী মায়া খাতুন (২০), চাচি মিনা খাতুন (৫২) ও রেজাউলের স্ত্রী খাদিজা খাতুন (২৩) ও গ্রাম ডাক্তার শরিফুল ইসলাম (৩৫)। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সন্তান না হওয়ার কারণে এ দুটি শিশু চুরির ঘটনা স্বীকার করেছে গৃহবধূ আলপনা খাতুন। রোববার দুপুরে সদর থানা চত্বরে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংসে পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম (বিপিএম) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি লিখিত বক্তব্য বলেন, প্রায় ৭ বছর আগে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার চরদোগাছী গ্রামের সাদ্দাম হোসেনের সাথে আলপনার বিয়ে হয়। এ বিয়ের অনেক দিন পার হলেও তার কোন সন্তান না হওয়ায় স্বামীসহ পরিবারের নানা নির্যাতন পোহাতে হয়। এ নির্যাতন ও কলঙ্ক থেকে মুক্তি পাওয়া জন্য স্বামীর পরিবারের লোকজনকে বলে তার পেটে এখন বাচ্চা। এ পরিকল্পনা করে শশুর বাড়ী থেকে বাবার বাড়িতে যায় আলপনা। এ সুযোগে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে আসা যাওয়া করে। ওই হাসপাতালের এক কর্মচারীর সাথে সক্ষতা গড়ে তোলে এবং মোবাইলে বিভিন্ন সময় কথা বলে শিশু চুরির বিষয়ে টাকা পয়সার লেন দেন করাও হয়। এ পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারী সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতাল থেকে ২৩ দিনের শিশু বাচ্চা মাহিমকে চুরি করে তার বাবার বাড়ী নিয়ে যায় আলপনা। সেখানে তার পরিবারসহ প্রতিবেশীদের জানাই এটি তারই সন্তান। শিশু আলপনার হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার বাবার বাড়ীর সদস্যরা দেখাশোনা করে। পরের দিন শিশু মাহিম অসুস্থ হলে তারা স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক শরিফুলের কাছে নিয়ে যায় এবং তাকে ইনজেকশন দেয়া হয়। কিছুক্ষণ পরে শিশু মাহিম মারা যায়। পরে আলপনা মৃত দেহ ঘরের রক্ষিত ধানের গোলার ভেতরে লুকিয়ে রাখে। এ শিশুটি জীবিত না থাকায় আলপনা বোরকা পড়ে আবারো ২৭ ফেব্রুয়ারী বিকেলে সিরাজগঞ্জ-হাটিকুমরুল গোলচত্বর এরকার সাখাওয়াত মেমোরিয়াল হাসপাতাল থেকে জন্মের প্রায় ৮ ঘণ্টা পর সামিউল নামের আরেকটি শিশু চুরি করে। তিনি আরো বলেন, বিশেষ গুরুত্বের সাথে এ বিষয়টি নিয়ে সদর থানা পুলিশ, সলঙ্গা থানা, র্যাব-১২, ডিবির সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন স্থানের সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। এ ফুটেজের নমুনা দেখে আলপনার বাবার বাড়ি অভিযান চালায়। এ সময় শিশু দুটি উদ্ধার ও ৫ নারীসহ ৭ জনকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় মৃত শিশুর বাবা চয়ন তালুকদার বাদী হয়ে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় মানব পাচার দমন আইনের একটি মামলা দায়ের করে। এ প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোছাঃ ফারহানা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মোঃ শরাফত ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) স্নিগ্ধ আক্তার, ওসি বাহাউদ্দিন ফারুকীসহ জেলার অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply