গত শতকের নব্বই দশকে বিটিভিতে প্রচারিত সাড়া জাগানো ধারাবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’ এর আলোচিত ‘মালু’ চরিত্রের অভিনেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, অভিনেতা, মঞ্চ নাটকের সাড়াজাগানো অভিনেতা, ঢাকা ড্রামা’র প্রতিষ্ঠাতা, গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক, নাট্য নির্দেশক ও নাট্যকার মজিবুর রহমান দিলু (৬৮) আর নেই। ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ফুসফুসে গুরুতর সমস্যার কারনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ভোর ৬.৩৫ এ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে এক পোস্টে জানিয়েছেন অভিনেতার বড় পুত্র অয়ন রহমান। ভর্তির পরই চিকিৎসক জানান, শরীরের বাঁ পাশের ফুসফুস ৭০ শতাংশ আর ডান পাশেরটা ১০ শতাংশ আক্রান্ত। করোনা নেগেটিভ হলেও তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। শরীরে প্লাজমাও দেওয়া হয়েছিল।
বিশিষ্ট এই অভিনেতা ২০০৫ সালে রক্তের ভাইরাসজনিত বিরল গুলেনবারি সিনড্রোম (জিবিএস) রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন কোমায় ছিলেন। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ২০১১ সাল থেকে শান্ত-মারিয়াম ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একই প্রতিষ্ঠানের জাতীয় দৈনিক ‘আজকের প্রত্যাশা’র মহাব্যবস্থাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০১৫ সালেও এক দফা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেবার তার রক্তে সেপ্টিসিমিয়া (সিডিমোনাস) নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়েছিল। কিডনিতে দুটো পাথরও দেখা দিয়েছিল। চিকিৎসা শেষে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলেন তিনি। সম্প্রতি আবার ফুসফুসের অসুখে আক্রান্ত হন।
প্রসঙ্গত, গত শতকের নব্বই দশকে বিটিভিতে প্রচারিত সাড়া জাগানো ধারাবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’ এর আলোচিত ‘মালু’ চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান মজিবুর রহমান দিলু। এখনো অনেকের কাছে তিনি ‘মালু’ নামেই পরিচিত। কিছুটা অভিমানেই দীর্ঘ বছর ধরে অভিনয় থেকে নিজেকে অনেকটাই দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন।
১৯৫২ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন দিলু। তাদের আদি নিবাস নোয়াখালী হলেও ঢাকায় কেটেছে জীবনের প্রায় পুরোটাই। এক সময় হোটেল পূর্বাণীর মার্কেটিং বিভাগে চাকরি করেছেন তিনি। মঞ্চ থেকে তার অভিনয় শুরু। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে অভিনয় শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৭৬ সাল থেকে টেলিভিশনে নিয়মিত অভিনয় করছিলেন। মজিবুর রহমান দিলুর উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটক হচ্ছে ‘আমি গাধা বলছি’, ‘নানা রঙ্গের দিনগুলি’, ‘জনতার রঙ্গশালা’, ‘নীল পানিয়া’, ‘আরেক ফাল্গুন’, ‘ওমা কী তামাশা’ প্রভৃতি। এ ছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় নাটক ‘তথাপি’, ‘সময় অসময়’ ও ‘সংশপ্তক’-এ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। বিটিভির অসংখ্য প্যাকেজ নাটকে অভিনয় করেছেন। শিশুদের সংগঠন টোনাটুনির সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেছেন। এ ছাড়া নাট্যকার ও নাট্যপরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন মজিবুর রহমান দিলু। স্ত্রী রানী রহমান, দুই ছেলে অয়ন রহমান, অতুল রহমান ও এক মেয়ে তানজিলা মুজিবকে নিয়ে ঢাকার উত্তরায় বসবাস করছিলেন। ছোট ছেলে অতুল রহমান কোরিয়ায় থাকেন। মেয়ে তানজিলা এমবিবিএস চিকিৎসক। বছর কয়েক আগে বিয়ে হয়েছে মেয়ের। নাট্যব্যক্তিত্ব ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আতাউর রহমানের ছোট ভাই মজিবুর রহমান দিলু।
গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে দেশবাসী।
Leave a Reply