বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০২:৪৭ পূর্বাহ্ন

“মুড়ির গ্রাম আত্রাইয়ের তিলাবাদুরী”

রওশন আরা পারভীন শিলা, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২১
  • ৫৫২ বার পঠিত

রমজান মাস সামনে রেখে সরগম হয়ে উঠেছে আত্রাই উপজেলার ছোট একটি গ্রাম যার নাম তিলাবাদুরী গ্রাম ।

তবে গ্রামটির নাম আলাদা নামেই চিনতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মানুষ। আশে পাশের কয়েকটি জেলার মানুষের কাছে এর পরিচিতি ‘মুড়ির গ্রাম’ নামে। তবে করোনা ভাইরাসের প্রভাব খুব বেশি পড়েনি মুড়ির গ্রামে।যানা যায়, রাসায়নিক সার কেমিক্যালমুক্ত মুড়ি উৎপাদন করে তিলাবাদুরী সহপার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের মানুষ এখন স্বাবলম্বী। নিজেদের জমিতে উৎপাদিত ধান সিদ্ধ করে চাল বানিয়ে মুড়ি ভাজেন তারা। ফলে তাদের তৈরি এই মুড়ির চাহিদা রয়েছে ক্রেতাদের মাঝে ব্যাপক। রমজানে ইফতারের অপরিহার্য অনুষঙ্গ মুড়ি। সারা বছরে যে পরিমান মুড়ি উৎপাদন হয় রমজান মাস এলেই তা দ্বিগুন হয়ে যায়। শুধু রমজান মাসই নয়, সারা বছর এলাকার মানুষের চাহিদা মেটায় এ গ্রামের মুড়ি।রমজান এসেছে তাই দম ফেলার সুযোগ নেই তিলাবাদুরী গ্রামের শতাধিক পরিবারের আমন, বিনা-৭, হরি ধান, ২৯ ধান, ১৬ ধান, ৫২ধানের মুড়ি উৎপাদিত হয় এই এলাকায়। ভালো মুড়ি দিয়ে ইফতারের জন্য রমজান মাস শুরু থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসেন এই গ্রামে। ইতোমধ্যে এখান থেকে মুড়ি ক্রয় করে রাজধানীর ঢাকা, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর রাজবাড়ী, নীলফামারীর সৈয়দপুর, সিরাজগঞ্জসহ দেশের নানা অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছে পাইকারীরা। তবে ধানের দাম এ বছর বেশি হওয়ায় এবার বিপাকে পড়েছেন মুড়ি উৎপাদনকারীরা। সরেজমিনে তিলাবাদুরী, জামগ্রাম, চামটা, স্বগুনা ও চামটা, নলদীঘি গ্রামে দেখা যায়, গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই তৈরি হচ্ছে “হাতে ভাজা” রাসায়নিক সার কেমিক্যালমুক্ত মুড়ি। বাতাসে ঝনঝন শনশন মুড়ি ভাজার শব্দ। প্রতিটি বাড়িতেই মুড়ি ভাজার জন্য রয়েছে আলাদা ঘর। এ কাজে নিয়োজিত বাড়ির মেয়েদের কেউবা ঊঠানে ধান শুকাচ্ছে, মাঝে মাঝে সেই ধান নেড়ে দিচ্ছে, মাটির চুলায় চাল গরম করছে আর সেই চাল নারিকেলের খিল কিংবা পাটসোলা দিয়ে নাড়াচাড়া করছে। কেউবা সেই গরম চাল মাটির পাতিলে রাখা বালিতে পাটসোলা দিয়ে নাড়াচাড়া করছেন। সঙ্গে সঙ্গে সেই চাল থেকে ফুটে যাচ্ছে মুড়ি। মুড়ি তৈরিতে গ্রামের নারীদের পাশাপাশি ভাজা থেকে শুরু করে বাজারজাত করণেকাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছেন এখানকার পুরুষেরাও। ভোর থেকে ভাজা শুরু হওয়া এসব মুড়ি সকাল হলে নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন হাটবাজার ও আড়তে। এ ছাড়াও নওগাঁ-বগুড়া মহাসড়কের ডাল সড়ক এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি মুড়ির আড়ৎ। স্থানীয় মুড়ি বিক্রেতা এবং দূরদূরান্ত থেকে আসা পাইকারীদের সমাগম ঘটে আড়ৎ গুলোতে। তাছাড়া ডাল সড়ক আবাতপুকুর বাজার, রানিনগর সদর উপজেলা বাজার, নওগাঁ শহর, আত্রাই উপজেলার, ভবানীপুরবাজার, আত্রাই আহসানগঞ্জ বাজার, স্টেশন বাজার, সিংসাড়া বাজার, বান্দাইখাড়া বাজার সহ বিভিন্ন হাটবাজার আড়ৎ গুলোতে নানা রকমের মুড়ি বেচাকেনা হয়। হাটবাজার ও আড়ৎগুলোতে আমন ও হরি ধানের মুড়ির চাহিদা বেশি।
আমন মুড়ি বিক্রি হচ্ছে প্রতিমন মুড়ি চার হাজার থেকে চার হাজার পাঁচশত টাকা। তিলাবাদুরী গ্রামের নিমাইচন্দ্র মুড়ি উৎপাদনকারী বলেন, শুধু মুড়ি কিনতেই রমজান মাসে এই গ্রামে আসেন অনেক মুড়ির পাইকারীরা। তবে এই ডিজিটাল যুগে নানা স্থানে মেশিন দ্বারা তৈরিকরা প্যাকেট করা মুড়ি তাদের হাতে ভাজা মুড়ির সুনাম নষ্ট করছে।আমাদের তৈরি হাতে ভাজা মুড়ি শুধু লবন আর বালু দারা তৈরি করা হয়। তাই সারা বছর ধরে তাদের হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা বেশি থাকে। স্বগুনা গ্রামের অচনাদেবী বলেন, একমন চালের মুড়ি ভাজলে ১০ থেকে ১২ কেজি মুড়ি তৈরি হয়।আমরা সংসারের অন্যান্য কাজের অবসরে মুড়ি ভাজার কাজ করি। মুড়ি ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম জানান, এ ব্যবসা স্বল্প পুঁজির হলেও প্রতিদিন দুই থেকে তিন লাখ টাকার মুড়ি বিক্রয় হয় স্থানীয় আড়ৎ গুলোতে। তাছাড়া স্বল্প পুঁজির এ ব্যবসা করে তিলাবাদুরীর গ্রাম সহপার্শ্ববর্তী গ্রামের মানুষেরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 1 =

এ জাতীয় আরো খবর..