বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন

বিনা চাষে আলু আবাদ করে কয়রায় কৃষকের মুখে হাসি।

মোঃরউফ কয়রা, খুলনা প্রতিনিধ।
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ৬৯৯ বার পঠিত

কয়রায় বিনা চাষে আলুর আবাদ কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কোনো চাষ ছাড়াই কাদার মধ্যে রবি ফসল আলু উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছে কৃষক। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, সরেজমিন গবেষণা বিভাগ এমএলটি সাইট কয়রা কৃষকদের কে আলু উৎপাদনে দিচ্ছেন ফ্রি বীজ, সার, কীটনাশক ও নানান রকম পরামর্শ। ২০২০ সালে কয়রা উপজেলার কয়রা সদর ইউনিয়নের ৩ নং কয়রা গ্রামে রবীন্দ্র ঢালী ১৬ শতাংশ জমিতে বিনা চাষে আলু চাষ শুরু করেন। তার এ অভিনব চাষাবাদ দেখে এলাকার অনেক কৃষক সরেজমিন কৃষি গবেষণা বিভাগের পরামর্শক্রমে বিনা চাষে আলু আবাদে ঝুকে পড়েছে। কৃষক আঃ হালিম জানান, বিগত বছর স্থানীয় কৃষক রবীন্দ্র ঢালীর বাড়ীতে বিনা চাষে আলু উৎপাদন দেখে তার মধ্যে আগ্রহ জাগে। তিনি বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার পরই সরেজমিন গবেষণা বিভাগের সহযোগিতায় পানি সরে যাওয়ার পরই কাদার মধ্যে ৩৩ শতক জমিতে বিনা চাষে আলু রোপন করে উক্ত আলুর ক্ষেতে খড়কুটা দিয়ে ঢেকে দেন। তার এ পদ্ধতি চাষ করা দেখে প্রতিবেশিরা তাকে পাগল বলে অনেকেই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করত। বাড়ীর পাশে রাঙা গাজী বলেই দিয়েছিলেন, শুধু কষ্ট করে লাভ নেই বিনা চাষে কাদায় আলু হয়না। অথচ মহারাজপুর গ্রামের আঃ হালিম ও রবীন্দ্র ঢালী বিনা চাষে আলু চাষ করে লাভবান হওয়ায় অনেকের মুখে ছাই পড়েছে। এদিকে বিনা চাষে আলু বাম্পার ফলন দেখে আগামীতে এ ধরনের আলু আবাদ বৃদ্ধি পাবে এই এলাকায় এমনটি ধারনা অনেকের। উপকূলীয় লবণাক্ত জমিতে আলুর ভাল ফলন দেখে কৃষি গবেষণা বিভাগ ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা এ পদ্ধতিতে আলু চাষের পরামর্শ দিচ্ছেন। তারা বলছেন কম খরচে এবং কম সার ও পানি ব্যবহার করে বেশি ফসল পাওয়া যাবে। ওই বিভাগের এমএলটি সাইটের কয়রার দায়িত্বরত বৈজ্ঞানিক সহকারি জাহিদ হাসানই এলাকায় পতিত জমি দেখে বিনা চাষে আলু রোপন করতে উদ্বুদ্ধ করেন কৃষককে। প্রথমে কেউ রাজি না হলেও পরে রাজি হয়ে ঝুকি নেন আঃ হালিম। ৩৩ শতক জমিতে রোপন করেন ২২০ কেজি আলুর বীজ। চাষের ধরণ ব্যাখ্যা দিয়ে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল শাহাদাৎ বলেন, ধান কাটার পর জমি তখনো পুরোপুরি শুকায় না জমিতে কাদা থাকে। সেই কাদা মাটির উপর দড়ি টানিয়ে সারি সোজা করে বীজ আলু বসিয়ে দিতে হয়। আলুর উপর গোবর ছড়িয়ে তার উপর নাড়া দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। কৃষক আঃ হালিমের বিশ্বাস ছিলনা বিনা চাষে গাছের গোড়ায় এত আলু হবে। আঃ হালিমের স্ত্রী তানজিলা বিনা চাষের আলুর ক্ষেতের নাড়া সরিয়ে গাছ তুলে দুই হাত ভরে আলু দেখিয়ে বলেন, আলুর আকারও বেশ বড়। কয়েক দিন পর বাজারে বিক্রি করা যাবে। খুলনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ হারুনর রশিদ বলেন, বাংলাদেশের উপকূলীয় দক্ষিণাঞ্চলে আমন ধান কাটার পর বিস্তীর্ণ জমি পতিত থাকে । মূল কারণ দীর্ঘ জীবন কাল সম্পন্ন আমন ধান, এটেল মাটি, স্বল্পমেয়াদি শীত এবং জমিতে “জো” না আসা। এই সকল প্রতিকুল পরিবেশে মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ধাবিত লবণ ও তাপ সহনশীল আলুর জাত বারি আলু- ৭২, ৭৩, ও ৭৮ এ ধানের খড় ব্যবহার করে বিনা চাষে আলু উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। যা এ অঞ্চলের মানুষের জন্য মুজিব শতবর্ষের এক নতুন উপহার। তিনি বলেন, এ পদ্ধতিতে খরচ কম, চাষের প্রয়োজন নেই। মাটিতে লবন উঠার আগেই বাড়তি একটা ফসল ঘরে তুলতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × two =

এ জাতীয় আরো খবর..