বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩, ০১:৫৪ পূর্বাহ্ন

প্রেমের ব্যর্থতা থেকে সফলতা শিখরে – লায়ন নবাব হোসেন মুন্না

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০২২
  • ১৬৭ বার পঠিত
হাসান:- বিয়েটা তাহলে সত্যিই করছো নাকি,
রীমা:- হুুম করছি,কেন কোন সমস্যা আছে তোমার,হাসান:-তাহলে আমায় ভালবাসলে কেন? জানতে পারি,রীমা:-আসলে তখন আমি ভুল করেছিলাম,এখন ভুল বুঝতে পেরেছি। হাসান:-কি ভুল ছিলো জানতে পারি আমি রীমা:তোমার মতো অত কম টাকা ওয়ালা ছেলেকে ভালবেসে ছিলাম,সেইটায় আমার বড় ভুল ছিলো।হাসান:-তার মানে আমার থেকে ভালো টাকা ওয়ালা  কাউকে পেয়েছে বুঝি।রীমা:- জি সেই ছেলে টা অনেক বড় লোক, হাসান:- কত টাকা বেতন পায় জানতে পারি। রীমা:- সেই একটা গ্রুপ কোম্পানীর বড় অফিসার প্রায় এক লাখ টাকা বেতন ছাড়াও গাড়ি বাড়ী ফ্রী। হাসান:-আমায় আর কিছুটা দিন সময় দিতে পারতে। রীমা:- না,আর সম্ভব না।আমি আর তোমাকে চাই না,হাসান:-আমি তোমাকে খুব ভালবাসি,তোমাকে ছাড়া কি ভাবে বাচবো, অর্থ কি সব কিছু তোমার জন্য। রীমা:- দেখ তুমি আর আমার কেউ না,আর আমি চাই না,তুমি আমার সাথে কোন যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে ভুলেই করবে না,এমন কি আমার বিয়েতে তুমি আসবে না। রীমা হাসানকে অপমান করে চলে গেল। আজ রীমার বিয়ে,আর রীমা স্বামী সংসার নিয়ে সুখে দিন কাটাতে লাগলো। একদিন কথাকথায় রীমা তার অতীত নিয়ে হাসানের প্রসঙ্গে তার স্বামী আবিদকে বললো, আবিদ জিজ্ঞেস করেছিলো কেন হাসানকে বিয়ে করেনি প্রতি উত্তরে রীমা বললো হাসান তার স্বামী হওয়ায় যোগ্য ছিলো না তাই তোমাকে বিয়ে করেছি, আবিদ এই প্রসঙ্গটা বাদ দিলেন। হাসানের সঙ্গে আর কোন সময়  যোগাযোগ হয়নি রীমার। নিয়তির খেলা ইতিমধ্যেই বিয়ের ছয় মাসের মাথায় আবিদ এক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়ে একটি পা হারিয়ে পঙ্গু হয়ে গেল। রীমা তখন দিশেহারা,এর মধ্যে আবিদ খবর পেল সমস্ত চিকিৎসার ব্যয় ভার কোম্পানীর পক্ষে থেকে বহন করা হবে। তাকে বিদেশে পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিবে। সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে  আবার কোম্পানীর চাকুরীতে যোগদান করতে বলা হয়েছে পদন্নোতি হয়ে জেনারেল ম্যানেজার হয়েছে। আবিদ রীমাকে নিয়ে দেশের বাহিরে চলে গেলেন তিন মাস পর দেশেই এসে স্ব পদে চাকুরীতে যোগ দান করলেন। প্রায় দুই বছর পর কোম্পানীর পক্ষে থেকে এক বিশাল জমকালো অনুস্টান আয়োজন করা হয়,কোম্পানীর সকল কর্মচারী কর্মকর্তাদের পরিবার নিয়ে অনুস্টানে হাজির হতে কোম্পানীর থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। যথা সময়ে সবাই অনুস্টানে হাজির হয়।সেই রীমা সহ আবিদ উক্ত অনুস্টানে উপস্থিত হয়, অনুস্টানে সকল কর্মচারী কর্মকর্তারা আবিদকে স্যার বলে ডাকছেন,এবং আবিদের সাথে শুভেচ্ছা ও সালাম বিনিময় করছেন, রীমা মনে মনে ভাবছেন আবিদ এই কোম্পানী সবচেয়ে বড় কর্মকর্তা না হলে আবিদ কাউকে স্যার ডাকতেন।একটু অতীত মনে করে সেই দিনের কথা ভাবলেন সে হাসানকে বিয়ে না করে ভুল করেনি। তখনো ভাবসাব অহংকারী মনে হচ্ছে কারণ আবিদ পঙ্গু হলেও স্ত্রী হিসাবে তাকেই সবাই সমীহ করছেন। ,এরপর খাওয়া দাওয়া গল্প গুজুব নিয়ে ব্যস্ত। কোম্পানীর লভ্যাংশ থেকে একটা ফান্ড সকল কর্মচারী কর্মকর্তাদের মাঝে বন্টন করা হবে। তাই অধীর আগ্রহে সবাই অপেক্ষা করছেন, কেননা আজ সবার জন্য একটা আনন্দের দিন। কখন সেই ঘোষণা আসে। রীমা যেন অপেক্ষা সইছে না, তাই রীমা আবিদের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো কে এই লোক যার জন্য সবাই এতক্ষণ অপেক্ষা করে আছেন আবিদ উত্তর দিতে যাবে, ঠিক তখনই একটা সুন্দরী মেয়ে এসে আবিদের হাতে কিছু কাগজ পত্র দিয়ে কি যেন বলছে আবিদ কাগজ পত্র গুলো নিয়ে মঞ্চে উঠলেন মাইক্রো ফোনে কথা শুরু করলেন। প্রিয় মহোদয়গণ অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার প্রিয় চেয়ারম্যান সাহেব আপনাদের সামনে এসে উপস্থিত হবে, আমি আপনাদের সামনে কিছু কথা বলতে চাই। আমাদের প্রত্যেকের সফলতা ও কোম্পানীর অর্জনের পিছনে রাত দিন পরিশ্রম করে যেই মহান মানুষটি দক্ষতার সাথে প্রচুর পরিমাণ মেধা মনন দিয়ে এই কোম্পানীকে বিশাল অর্জন সম্পদশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, এমনকি পৃথিবীর আটচল্লিশ টা দেশে আমাদের পন্য সামগ্রী রপ্তানি হচ্ছে সেই মানুষটি কথা বলবো, যার জীবন টা শুরু হয়ে সাদামাটা ভাবে বিলাসীতা পছন্দ করতে না বলে এক সময় উনার প্রিয় ভালোবাসার মানুষটি উনাকে ছেড়ে চলে যান, টাকা ওয়ালা সঙ্গে বিয়ে করার জন্য কিন্তু তখনই উনার কাছে টাকার কোন অভাব ছিলো না। প্রচুর পরিমাণ এমনকি প্রচন্ড ভালবাসতেন মেয়েটিকে আমি বললো সেই মেয়েটি ভাগ্যহতা রত্নখনি চিনতে ভুল করেছিলো জানি না, মেয়েটি এখন কার সাথে সংসার করছেন। তখনই উনি শপথ নিয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ কোম্পানী হিসাবে এই প্রতিষ্ঠান কে গড়ে তুলবেন। যাক সেই কথা উনি শুধু আমাদের কথা চিন্তা ভাবনা করেছেন। এখনো বিয়েসাদী করে সাংসারিক হয়নি। এই কথা গুলো পিছনে কিছু কারণ আছে আমি আবিদ আজ থেকে দশ বছর আগে উনার ম্যানেজার হিসাবে চাকুরীতে যোগদান করি আমি সহ তিনজন ছিলাম আজ শুধু  কোম্পানী দেশে বিদেশের সব মিলিয়ে ঊনত্রিশ হাজার কর্মচারী কর্মকর্তা দক্ষতার সহিত করছেন। চেয়ারম্যান আমি কাউসার সাহেব ছাড়া আপনারা সবাই এখানে নতুন তাই কথা গুলো আপনার সামনে উপস্থাপন করলাম। আমাদের প্রিয় চেয়ারম্যান সরাসরি কানাডা থেকে বিমানবন্দর হয়ে  আমাদের মাঝে উপস্থিত হচ্ছেন,পরশু রাতে ফিরতি বিমানে জার্মানি উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। সুন্দরী মেয়েটা আবার এসে আবিদ সাহেবের কানে কি যেন বললো। এইবারে আবিদ সাহেব ঘোষণা করলেন তখন ডিসপ্লে তে বেশে উঠলেন অফ ওয়াইড সুট টাই চোখে হালকা ফ্রেমের চশমা পরা মাথার চারিদিকে ছোট ছোট চুল মাঝখানে টাক, মুখের কাচাপাকা হালকা দাড়ি একজন ভদ্রলোকের ছবি অতিথি আসনে তখন রীমা ভদ্রলোক লোকটা কে প্রথমে চিনতে পারে নাই মঞ্চে উপবিষ্ট হচ্ছেন আজকের আকর্ষন যাকে এক নজর দেখার জন্য আমরা সবাই অপেক্ষামান আমাদের কোম্পানীর সুদক্ষ চেয়ারম্যান ডঃ হাসানুজ্জামান স্যার। মঞ্চের ডুকে এক নজর চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিলেন এক জায়গায় চোখ আটকে গেলো, কিন্তু চিনতে ভুল করেনি, তারপর মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে আসসালামু আলাইকুম দিয়ে শুরু করলেন, আপনারা সবাই কেমন আছেন পরিবার পরিজন নিয়ে হলে রুমে একসঙ্গে আওয়াজ স্যার ভালো আছি ইনশাআল্লাহ, ডঃ হাসানুজ্জামান আলহামদুলিল্লাহ বলে আবার তাকালেন,বিশ্বাস করে বা না করেন রীমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরলো। ডঃ হাসানুজ্জামান ঘোষণা করলেন কোম্পানি বর্তমান মুল প্রায় ৯৭ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে দেশ বিদেশে ঊনত্রিশ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী আছেন আপনারা আগামী বছর ২০২৩ সাল জানুয়ারী থেকে সরাসরি ৩০% শেয়ার হোল্ডার হিসাবে অংশীদার হবেন। যেহেতু আপনারা যখন মালিক হয়ে যাচ্ছেন আর কোন বেতন সিস্টেম কোম্পানিতে থাকবে না,ক্যাটাগরি ভিক্তিতে আনুষঙ্গিক ভাতা থাকবেন। করতালিমুখর হলরুম ডঃ হাসানুজ্জামান হাতে ঈশারায় তালি থামাতে গিয়ে  আবারো নজর দিতেন রীমার দিকে। আবার বলা শুরু করলেন ২০% স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা,মসজিদ,মন্দির,গির্জা,প্যাগোডায়। সংখ্যানুপাতিক হারে প্রতি বছর লভ্যাংশ অংশ থেকে বরাদ্দ দেওয়া হবে। ২০% সুবিধাবঞ্চিত শিশু,গরীব অসহায় মেয়ে বিয়ে দুস্থ মানুষের জন্য ও বিভিন্ন জটিল রোগের আক্রান্তদের জন্য লভ্যাংশ অংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছেন। বাকী ৩০% এর লভ্যাংশ দিয়ে দেশে ৬ টি সর্বাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা সহ যাবতীয় খরচ সম্পুর্ণ কোম্পানি তহবিল থেকে বহন করা হবে। এখানে একটা কথা উল্লেখ করতে চাই শুধু ৩০% এর মালিক আপনারা হবেন। যত পুজি বাড়বে আপনারা তত লাভবান হবেন। কোম্পানি ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালনা হবে ১ জানুয়ারী ২০২৩ সাল থেকে, পরিশেষে আপনাদের ইতিমধ্যেই কোম্পানি আইনজীবী প্যানেলের সাথে আমি কথা বলেছি আগামী মাসে দুয়েক মধ্যেই ট্রাস্টি বোর্ড অনুমোদিত হবেন। ট্রাস্টি বোর্ডের নির্বাহী প্রধান সহ পাচজন মেম্বার থাকবে, আমার মৃত্যুর পরও ট্রাস্টি বোর্ড কোম্পানির সকল সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করিতে পারিবেন। কোন বাধ্যতা থাকবে না। কালকে ট্রাস্টি বোর্ডের যারা থাকছেন তাদের নাম ঘোষণা করা হবে,যারা ট্রাস্টি বোর্ডে থাকবেন কোম্পানি সেক্রেটারী তাদেরকে ফোনে জানিয়ে দিবেন। এবং সময় বলে দিবেন, হেড অফিসের কনফারেন্স রুমে তাদের সাথে আলোচনা হবে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে। সব কিছু দেশের আইন অনুযায়ী করা হবে, সকালে ১০ টা থেকে  আমি অফিসে উপস্থিত থাকবো। এখন আমার জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই পুরা হলে রুমে পিনপতন নীরবতা শুধু রীমা চোখের জল টপটপ করে পড়ছেন,কেউ খেয়াল করেছেন কিনা জানি না। ডঃ হাসানুজ্জামান সাহেবের মঞ্চ থেকে প্রায় রীমার দিকে চেয়ে সমস্ত কথা গুলো বলেই যাচ্ছেন।কথা গুলো বলে তিনি একটা চেয়ারে বসলেন মিনারেল ওয়াটারের থেকে একঢোক পানিতে খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিয়ে আবার বলা শুরু করলেন। আবেগময় অনুরাগ নিয়ে কিছু কথা। যখন আপনার কাছে খুব প্রিয় কেউ আপনাকে অপছন্দ অবহেলা কিংবা ঘৃণা করে,তখন প্রথম প্রথম আপনি খুব কষ্ট পান এবং আশা করেন যে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিছু দিন পর আপনি সেই প্রিয় ব্যক্তিকে ছাড়া থাকতে শিখে যাবেন,আর অনেকদিন পরে আপনি আগের চেয়েও অনেক বেশী বেশী খুশি থাকবেন। যখন আপনি বুঝতে পারবেন যে কারো কাছে ভালবাসা জীবনে অনেক কিছুই আসে যায়,কিন্তু কারো ঘৃণা ও অবহেলায় আপনার জীবনে সত্যিই কিছু আসে যায় না। যদি কখনও কাউকে হারিয়ে পেলেন এবং তার জন্য কষ্ট পায়,তখন মনে করবে আপনি  পৃথিবীতে একাই এসেছিলে। তাই আপনাকে একাই পথ চলতে হবে, আর যদি অনেক কষ্ট পান, তখন কষ্টটাকে বুকে চাপা দিয়ে দিন, কারণ কষ্ট টা আপনাকে সুখ এনে দিবে,এবং সেখান থেকে শক্তি খুঁজেন তারপর আবার পথ চলতে শুরু করেন। কারন এই পৃথিবীতে স্বার্থপর মানুষ গুলো কেউ কারো আপন নয়,কারো জন্য এই পৃথিবীর ঘূর্ণিমান থেমে থাকে না। তাহলে আপনি কেনই বা নিজের পথ চলা থামিয়ে দিবেন। একদিন আমিও একাই চলতে শুরু করেছিলাম আল্লাহ কাছে শুকরিয়া তিনি মহান দয়ালু পথে পথে আমাকে সাহায্য করেছেন, এই গুলো যখন বলছিলেন ডঃ হাসানুজ্জামান সাহেবের চোখের অশ্রুতে ভিজে গেল,তিনি একটু আড়াল হয়ে চশমা খুলে চোখ দুটো মুছে নিলেন। তারপর বললেন আপনাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ কেউ যদিও বা আমাকে অবজ্ঞা করে চলে গেছেন, কিন্তু আপনারা কোম্পানির সকলে সব সময় আমার পাশে অতীতে ছিলেন, বর্তমানে আছেন ভবিষ্যতে আছেন থাকবে। এইটা আমার আস্থা ভরসা আপনাদের প্রতি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × five =

এ জাতীয় আরো খবর..