মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৬:৩১ অপরাহ্ন

পলাশবাড়ীতে একই পরিবারের প্রতিবন্ধী দুই ছেলে : নেই তাদের একটিও হুইল চেয়ার

আরিফ উদ্দিন, গাইবান্ধা প্রতিনিধি
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৭ মার্চ, ২০২১
  • ৬৫৬ বার পঠিত
প্রতিকী ছবি

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর পল্লীতে নুর আলম শেখ তার প্রতিবন্ধী দুই ছেলেকে নিয়ে মানবতার জীবন যাপন করছেন।

বড় ছেলে শিপন মিয়া (১৫) জন্মের পর থেকেই ধিরে ধিরে হাত-পা চিকন হয়ে যায়। এক পর্যায়ে তাঁর হাটাচলা বন্ধ হয়ে যায়। সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে স্মার্ট মোবাইল না থাকায় অনলাইনে ক্লাশ করতে পাচ্ছে না।

ফলে লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়েছে। সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত একই স্থানে বসে থাকতে হয়। বসে থাকতেও নিদারুন অমানবিক কষ্ট। মুহুর্তেই শুধু কষ্ট আর কষ্ট। যেন নিস্তার নেই কষ্ট আদৌ লাঘব হবে কি-না? বিগত জন্মের পর থেকেই তার এমন অমানবিক জীবন যাপন।

প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে তার ভীষন কষ্ট। এসময় পড়নের কাপড়েই প্রকৃতির কাজ সাড়তে হয়। অপরের সাহায্য ছাড়া তাঁর জীবনযাত্রা চলতে পারে না। তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হুইল চেয়ার।

নুর আলম শেখের বাড়ী পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের কুমারগাড়ী গ্রামের কানিপাড়ায়। পেশায় একজন দিন মজুর। নিঃস্ব পরিবারটি সরকারের হতদরিদ্রদের তালিকায় নাম না থাকায় ১০ টাকা দরে চাল ক্রয় করতে পাচ্ছে না। প্রতিবন্ধী দুই ছেলের জন্য নেই একটি হুইল চেয়ার।

সম্প্রতি নুর আলমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শারিরীক প্রতিবন্ধী দুই ছেলে ঝুবড়ি ঘরে বসে আছে। ছোট ছেলে রিপন ও বড় ছেলে শিপন। নুর আলম জানান, দুই ছেলেকে সাধ্যমতে চিকিৎসা করেছি।

বড় ছেলে শিপন শেখ সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। আগে একটি হুইল চেয়ার ছিল, তা নষ্ট হয়ে গেছে, ফলে কোলে করে নিয়ে শুধু বিদ্যালয়ে নয় সব জায়গাতে নিয়ে যেতে হয়।
তিনি আরো জানান, তাদের সংসার চলে অভাব-অনটনে। অনেক ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে সংসারের ঘানি টানছেন তিনি। দুই ছেলেকে হুইল চেয়ার কিনে দেয়ার সার্মথ নেই। তাই দুইটি হুইল চেয়ার পেলে কিছুটা স্বাভাবিক চলাচল করতে পারবে তার দুই ছেলে।

প্রতিবন্ধী শিপন শেখ বলেন, ছোট থেকে হাটতে পারি না। দাঁড়াতে গেলে মেরুদÐ সোঁজা হয় না। পা দু’টি চেকন (সরু) হয়ে গেছে। এক সময় হুইল চেয়ার করে স্কুলে যেতাম, সপ্তম শ্রেণী পযর্ন্ত পড়েছি।

তারপর হুইল চেয়ারটির চাকা নষ্ট হয়ে গেল পাশাপাশি করোনা ভাইরাসে স্কুল বন্ধ হল।
সে দুঃখ করে বলেন, যদি শাবিরীক ভাবে ভালো হতাম। তাহলে বাবার সাথে সংসারের কাজ করতাম। এখন সংসারে এক প্রকার বোঝা হয়ে আছি। আমি হাটতে পারি না, ছোট ভাইটিও প্রতিবন্ধী।

কেউ যদি আমাদের দু’টি হুইল চেয়ার দিত। তবে স্বাভাবিক ভাবে একা একা চলাচল করতে পারতাম। পাশাপাশি স্মার্ট মোবাইল থাকলে অনলাইনে ক্লাশ করতাম। এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়ার করার ইচ্ছা থাকলেও অর্থাভাবে তা স্বপ্নের মত লাগে আমার।

প্রতিবেশী এন্তাজ মিয়া বলেন, নুর আলম দিনমজুরী কাজ করে। হুইল চেয়ার কিনে দিবে কি দিয়ে। কেউ যদি তাদের হুইল চেয়ার কিনে দিত। তাহলে খুবই ভাল হত। তার দুই ছেলের জন্য হুইল দরকার। যাতে একটু স্বাভাবিক চলাচল করতে পারে।

মনোহরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চট্টু জানান, হুইল চেয়ার দেয়ারমত আমাদের কোন সুযোগ নেই। তবে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করলে আমি সুপারিশ করে দেব। ১০ টাকা চালের বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি জানান, হতদরিদ্রদ্রের তালিকা অনেক আগে হয়েছে। নতুন তালিকা করা হলে আমি তাদের নাম অন্তর্ভ‚ত করে দিব

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − 16 =

এ জাতীয় আরো খবর..