যৌতুকের দাবিতে স্বামীর অত্যাচারের শিকার ময়না নামে এক গৃহবধূ এরই মধ্যে সংসারছাড়া হয়েছেন। দেড় বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সংসার ঠেকাতে পারেনি। অবশেষে স্বামীর সংসার ফিরে পেতে আদালতের দারস্থ হয়েছেন। প্রায় ৩ বছর আগে বধূবেশে স্বামীর সংসারে গিয়েছিলেন ময়না, কিছুদিন সুখে-শান্তিতেই তাদের সংসার চলছিল। কিন্তু হঠাৎ তাদের সংসার ঢেকে যায় কালো মেঘ তার একটাই কারণ, যৌতুক।কিন্তু ময়নার বাবার পরিবারের সেই সামর্থ্য নেই এ কারণে স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকদের সঙ্গে তার ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকত।
এমতা অবস্থায় মায়নার কোল জুড়ে পৃথিবীতে আসে ফুট,ফুটে ছেলে সন্তান।যৌতুকের চাহিদা মেটাতে না পারায় প্রতিনিয়ত স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকদের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকারও হতে হয় তাকে।ভুক্তভোগী গৃহবধূ তাজমিন নাহার (ময়না) উপজেলার সদর ইউনিয়নের ২নং কয়রা গ্রামের জামাল ঢালীর মেয়ে।প্রায় তিন বছর আগে (২৬-০১-২০১৯)তারিখে একই গ্রামের মিজানুর রহমান শেখের ছেলে মেহেদী হাসানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।স্থানীয় লোকজন ও প্রতিবেশীরা জানান, বিয়ের কিছুদিন পর থেকে ময়না-মেহেদীর দাম্পত্য জীবনে কলহ শুরু হয়। প্রায় সময়ই ঝগড়াঝাটি লেগে থাকত।
মামলার এজাহার ও ময়নার পরিবার সূত্রে জানা যায়, তাদের প্রায় তিন বছরের দাম্পত্য জীবনে ফুটফুটে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম হয়।তার বয়স বর্তমানে দেড় বছর। দাম্পত্য জীবনের শুরুতে মেহেদীর সংসারে অভাব-অনটন থাকায় ময়না তার বাবার বাড়ি থেকে ২০ হাজার টাকা ব্যবসার জন্য স্বামীকে এনে দেন।কয়েক মাস দাম্পত্য জীবন ভালো চললেও বাকি দুই বছরই যৌতুকের দাবিতে স্বামীর অত্যাচার ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন ময়না । তারপর দিন যত যেতে থাকে যৌতুকের দাবিতে তার ওপর বাড়তে থাকে অত্যাচারের মাত্রা। একপর্যায়ে স্বামী স্থানীয় আত্মকর্মসংস্থানের জন্য শ্বশুরবাড়ি থেকে একটি ইজিবাইক এনে দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এই ইজিবাইক দিতে অক্ষমতা প্রকাশ করায় তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়।
প্রায় সময় মারধর করতে থাকে। স্বামীর অত্যাচার-নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে পাড়া-প্রতিবেশীর দারস্থ হলে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।সামাজিকভাবে সালিশে যৌতুক ছাড়া তাকে আবারো স্বামীর সংসারে নিয়ে যেতে চাপ দেয়া হলে স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন ময়নাকে সংসারে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানায়।এদিকে স্বামীর কথামতো যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় ময়নাকে ঘর থেকে বের করে দেয়।পরে স্বামী গোপনে আরেকটি বিবাহ করে এরপর থেকেই গত প্রায় ৪ মাস ধরে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন ময়না।
উল্টো স্বামী নিজের মাকে দিয়ে ময়নার বাবাসহ আত্মীয়স্বজনকে জড়িয়ে আদালতে একটি হয়রানিমূলক মারামারি ও লুটপাটের মামলা দায়ের করে। ময়নার বাবা ও ভাইয়েরা ওই মামলায় জেলও খেটেছেন।ময়নার দিনমজুর পিতা জামাল ঢালী বলেন, আমি গরিব মানুষ।দিন আনি দিন খাই, সবাই ফেলে দিলেও আমার সন্তানকে তো আর আমি ফেলে দিতে পারি না। অভাবের সংসার একদিকে মেয়ে ও সন্তানের ভরণ-পোষণ দিচ্ছি, অপরদিকে মামলা চালাতে গিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।
এদিকে বাবার বাড়িতে একমাত্র শিশুসন্তানকে নিয়ে সংসার ছাড়া ময়নার কেঁদে কেঁদে দিন কাটচ্ছে।এ ব্যাপারে জানতে ময়নার স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তারা ফোন ধরেনি।ময়নার কাছে জানতে চাইলে ময়না কান্নায় ভেঙে পড়েন তিন বলেন, আমার একটি সন্তান আছে। আমি বিয়ের পর থেকেই স্বামীর সংসার করতে চেয়েছি।কিন্তু যৌতুকলোভী মাদকাসক্ত স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনের অত্যাচারে সংসার ছেড়ে বাবার বাড়িতে আসতে বাধ্য হয়েছি। তার মাকে দিয়ে আমার বাবা, বোনজামাই ও তার ছোট ভাইকে জড়িয়ে হামলা ও লুটপাটের সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে।আমি স্বামীর সংসারে ফিরতে চাই এবং অত্যাচার-নির্যাতন থেকে বাঁচতে চাই।
Leave a Reply