শনিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৩৪ অপরাহ্ন

কাঁদছে শতাধিক পরিবার, হেলিকপ্টার রুবেলের স্মার্ট প্রতারণায়।

অনুভূতি ডেক্সঃ-
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০২১
  • ৫৬৩ বার পঠিত

কুষ্টিয়ার খোকসায় স্মার্ট প্রতারণার শিকার, শতাধিক দুস্থ পরিবারের ঘর নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বাসস্থান হারিয়ে প্রতিবেশীদের ঘরে আশ্রয় নেয়া এসব পরিবারগুলো চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এবং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের অধিক লাভজনক প্রকল্প পাইয়ে দেয়ার কথা বলে প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

গড়াই ও সিরাজপুর হাওড় নদীবেষ্টিত বেতবাড়িয়া ইউনিয়ন। মোট জনসংখ্যা ১৫ হাজারের মতো। নদীভাঙন কবলিত এলাকায় উন্নয়নে ‘দূত’ হিসেবে সম্প্রতি হাজির হন প্রতারক চক্রের প্রধান রুবেল আহম্মেদ। নিজেকে একটি সাহায্য সংস্থার বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর পরিচয় দেন। হেলিকপ্টারে চলাফেরা করেন এই স্মার্ট প্রতারক। বিদেশিদের অর্থায়নে বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের দুস্থদের আধাপাকা টিনশেড ঘর তুলে দেয়ার কাজ শুরু হয়। কিন্তু মাঝ পথে এসে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের অধিক লাভজনক প্রকল্প পাইয়ে দেয়ার কথা বলে প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
পরে কৌশলে সটকে পড়েন প্রতারক চক্রের প্রধান হেলিকপ্টার রুবেল। ফলে দুস্থদের পাকাঘর নির্মাণ প্রকল্প বন্ধ করে দেন সংশ্লিষ্ট এলাকার মেম্বাররা। আর বাসস্থানহারা দুস্থরা পড়েন বিপাকে। এই শীতের মধ্যে প্রতিবেশীর ঘরের বারান্দায় আবার কেউ প্রতিবেশীর রান্নাঘরে কাপড় টাঙিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
ভুক্তভোগী কয়েকজন মেম্বার জানান, তিন মাস আগে এই রুবেল আহম্মেদ কানাডিয়ান কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশল কো-অপারেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর পরিচয় দিয়ে এক দালালের মাধ্যমে এলাকায় আসেন। বাহন হিসেবে ব্যবহার করতেন হেলিকপ্টার। বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবুল আখতারসহ পরিষদের মেম্বারদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। হাতে নেয়া হয় বনগ্রামে তিনটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, রিসোর্ট, আবাসন ও জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের উন্নয়নে হরেক রকম প্রকল্প। বসবাস শুরু করেন ইউনিয়ন পরিষদের ভবনে। নিয়োগ দেন দুই রাঁধুনিসহ প্রায় ৮ জন কর্মচারী।
জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের উন্নয়নে ওয়ার্ডের মেম্বারদের মাধ্যমে চাঁদট গ্রামে গড়াই নদীরভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হয়। একই সময়ে ৭, ৮, ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১২০টি অসহায়-দুস্থদের গৃহনির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন ঘর নির্মাণের ধুয়ো তুলে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের রুস্তম, ছকিরন নেছা, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্লভ, মজিদ, তমেজ, ছাইদুল, ওহাব, আতিয়ার, বুরো, আপিল, শাহিনের মতো শতাধিক দুস্থ পরিবারের মাথাগোঁজার শেষ আশ্রয় বসতঘর ভেঙে ফেলা হয়। সেখানে এসব পরিবারের জন্য ১৫ ফুট লম্বা ও ১০ ফুট চওড়া দুই কক্ষের থাকার ঘর সঙ্গে রান্নার ঘর ও পাকা টয়লেট নির্মাণকাজ শুরু করা হয়।গম পূর্বপাড়ায় বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল আখতারের নামে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য চড়া দামে জমি বায়না করা হয়। ইতোমধ্যে এই প্রতারক চক্র আরও দুইশো কোটি টাকার লাভজনক প্রকল্প পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে একাধিক মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে ভুক্তভোগী জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 2 =

এ জাতীয় আরো খবর..